বাংলাদেশের সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাচারের সময় প্রাণীগুলো উদ্ধার করে বিজিবি
পাটাগোনিয়ান মারা আর্জেন্টিনার প্রাণী। বাংলাদেশের সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাচারের সময় প্রাণীগুলো উদ্ধার করে বিজিবি
হরিণের মতো চোখ আর খরগোশের মতো কান। মাঝারি গড়নের প্রাণীটি আসলে কী, এ নিয়ে জনমনে ছিল অনেক প্রশ্ন।
বাংলাদেশ থেকে ভারতে পাচারের সময় সাতক্ষীরার কলারোয়ার তুষখালী সীমান্ত থেকে উদ্ধার হয় এমন সাতটি প্রাণী। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ধারণা ছিল, প্রাণীগুলো হয়তো বন্য খরগোশ। প্রায় সাড়ে পাঁচ মাস প্রাণীগুলো তাদের কাছে ছিল। ২২ আগস্ট বিজিবি প্রাণীগুলোকে বন বিভাগের কাছে হস্তান্তর করে। তখন জানা যায়, এগুলো আসলে আর্জেন্টিনার ‘পাটাগোনিয়ান মারা’।
বন বিভাগ জানিয়েছে, বিজিবি সাতটি পাটাগোনিয়ান মারা আটক করলেও একটি মারা যায়। পরে বন বিভাগের কাছে বিজিবি ছয়টি প্রাণী হস্তান্তর করে। এগুলো এখন খুলনার বন্য প্রাণী রেসকিউ সেন্টারে রাখা আছে। খরগোশ বা গিনিপিগ গোত্রীয় পাটাগোনিয়ান মারা একটি স্তন্যপায়ী প্রাণী। সামনের পায়ের তুলনায় পেছনের পা দুটো বেশ দীর্ঘ। সামনের দুই পায়ে চারটি আঙুল, পেছনের পায়ে তিনটি করে আঙুল হয়। গায়ের রং সাধারণত বাদামি। তবে কখনো কখনো কালোর মিশেলও দেখা যায়।
সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) আবু নাসের মোহসিন হোসেন আজ বুধবার দুপুরে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, প্রাণীগুলোকে খুলনার বন্য প্রাণী রেসকিউ সেন্টারে পাঠানো হয়। প্রকৃতি সংরক্ষণবিষয়ক সংস্থাগুলোর জোট আইইউসিএন এর তালিকা অনুযায়ী, বৈশ্বিকভাবে এটি বিপদাপন্ন প্রাণী। এ ধরনের প্রাণী আমদানি-রপ্তানি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। তাঁর ধারণা, বাংলাদেশকে ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করে আন্তর্জাতিক পাচারকারী চক্র প্রাণীগুলো ভারতে পাচার করছিল। এর আগে বিভিন্ন সময় বাংলাদেশ হয়ে ভারতে পাচারকালে জিরাফ, জেব্রা, সিংহের শাবক উদ্ধার করা হয়েছে। ভারতের বিভিন্ন প্রদেশের রিসোর্টের চিড়িয়াখানায় এসব প্রাণী রাখা হয়।
পাটাগোনিয়ান মারা সাধারণত সাড়ে ২৭ ইঞ্চি দীর্ঘ হয়। চোখ আর কানের তুলনায় লেজটা ছোট, দেড় থেকে দুই ইঞ্চি। ওজন ৮ থেকে ১৬ কেজির মতো। এরা তৃণভোজী। আয়ু ১৪ বছর পর্যন্ত হতে পারে।
হাতেম সাজ্জাদ মোহাম্মদ জুলকারনাইন, ভেটেরিনারি সার্জন, গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক
আর্জেন্টিনার পাটাগোনিয়ান মারা প্রাণীটি নিয়ে এখন কী করা হবে, সেই প্রশ্নের জবাবে বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটে দীর্ঘদিন কাজ করা এই কর্মকর্তা বলেন, ‘এগুলো এখন হয়তো আমরা পৃথকভাবে আমাদের সাফারি পার্কে রাখব। তবে উচিত হলো যে দেশ বা অঞ্চলের প্রাণী, সেই প্রকৃতিতে তাদের ফিরিয়ে দেওয়া।’