বাগেরহাটের চিতলমারীত দীর্ঘ বারো বছরের বেশি সময় ধরে মায়ের সমাধীস্থানসহ একমাত্র বসত ঘর ফিরে পেতে বিভিন্ন দপ্তর ও জনপ্রতিনিধিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন হরিদাস মজুমদার নামের অবসরপ্রাপ্ত এক ব্যাংক কর্মকর্তা। চাকুরি ও সন্তানের পড়া-খেলার জন্য এলাকার বাহিরে থাকায় খড়মখালি হরিসভা আশ্রম কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ওই বসতঘর ও জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে।
নিজের বাড়িতে বসবাস করতে প্রতিনিয়ত আশ্রম কর্তৃপক্ষের বাঁধার সম্মুখিন হচ্ছেন ওই ব্যাংক কর্মকর্তা। অপরদিকে হরিসভা আশ্রম মন্দির কর্তৃপক্ষের দাবী বিরোধপূর্ণ ওই জমিতে তাদের পক্ষে উচ্চ আদালতের রায় রায় রয়েছে। ফলে ওই জমির মালিক সার্বজনিন আশ্রম কর্তৃপক্ষ।
তবে উভয় পক্ষকে নিয়ে কয়েকবার স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ মিমাংশার জন্য বসলেও রহস্যজনক কারণে বিষয়টির কোন মিমাংশা হয়নি।
অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা হরিদাস মজুমদার বলেন, ১৯৮৯ ও ৯১ সালে চিতলমারী খড়মখালী মৌজায় খড়মখালী হরিসভা আশ্রমের সামনে সূর্যকান্ত চক্রবর্তী, প্রফুল্ল বৈরাগী, বিজন চক্রবর্ত্তী, ও বিধান চক্রবর্ত্তীর কাছ থেকে ৪টি দলিলে ২১ শতক জমি ক্রয় করি। ক্রয়র করার পর থেকেই আধাপাকা টিনসেড ঘর তৈরি করে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে দীর্ঘদিন যাবত বসবাস করেছি।
বদলীজনিত চাকুরীর সুবাদে এবং একমাত্র ছেলের উচ্চ শিক্ষার জন্য বসতবাড়ি ফেলে রেখে শহরে ভাড়া ছিলাম। আমার ক্যাডেট পড়ুয়া ছেলেটি এখন চীনে এয়ার ইঞ্জিনিয়ার পেশায় নিয়োজিত রয়েছে। ছেলেকে মানুষ করতে যেয়ে দীর্ঘ সময় এলাকার বাহিরে ছিলাম।
আমার অনুপস্থিতির সুযোগে আশ্রম কর্তৃপক্ষ বসত ঘরের কাঠের বেড়া ও বিভিন্ন মালামাল খুলে নিয়ে গেছে। তিনি আরো জানান, এই জমির বৈধ দলিল ও বিআরএস রেকর্ড তার নামে রয়েছে।
সেই অনুযায়ী হাল সনের খাজনাও প্রদান করা আছে। এই বাড়ির পিছনে মায়ের সমাধীস্থান রয়েছে। বর্তমানে এই সমাধীর ওপর আশ্রম কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের সময় রান্না চুলা বসায়।
আমি আমার বসতঘরসহ মায়ের সমাধীস্থান ফিরে পেতে অসহায়ের মত দীর্ঘদিন যাবৎ দ্বারে দ্বারে ঘুরছি।
হরিদাস মজুমদারের অভিযোগ অস্বীকার করে হরিসভা আশ্রমের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ মন্ডল জানান, হরিদাস মজুমদার যাদের কাছ থেকে জমি ক্রয় করেছেন, তারা আগেই আশ্রম কর্তৃপক্ষকে এই জমি মৌখিক ভাবে দান করে দিয়েছেন। তাছাড়াও এই জমি নিয়ে উচ্চ আদালতে দায়েরকৃত মামলায় আশ্রমের পক্ষে রায় এসেছে। ফলে জমির মালিক সার্বজনিন আশ্রম কর্তৃপক্ষ। তিনি আরো বলেন, উচ্চ আদালতের রায় উপেক্ষা করে হরিদাস মজুমদার বিভিন্ন ভাবে ওই জমি দখল করার পায়তার চালাচ্ছে।
চিতলমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ এইচ এম কামরুজ্জামান খান বলেন, বিরোধপূর্ণ ওই জমি নিয়ে হরিদাস মজুমদার ও আশ্রম কর্তৃপক্ষের মধ্যে মামলা চলমান রয়েছে। উল্লেখিত জমি নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে কোন প্রকার বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি না হয় সেজন্য আমাদের সজাগ দৃষ্টি রয়েছে।
চিতলমারী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অশোক কুমার বড়াল বলেন, দুই পক্ষকে নিয়ে আমরা একাধিকবার শালিস মীমাংসার জন্য বসেছি। বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। জানতে পেরেছি উচ্চ আদালত থেকে আশ্রমের পক্ষে রায় হয়েছে। আদালতের বাইরে আর কিছু বলব না।