ছবি নির্মাণকালে পাকিস্তানিদের নজরে পড়েন কলাকুশলীরা। জিজ্ঞাসাবাদের জন্যে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল জহির রায়হানকে। পরে জহির রায়হানকে মুক্তি দিলেও নির্দিষ্ট সময়ে ছবি মুক্তি না দেওয়াতে জনগণ আন্দোলনে নেমে পড়েছিল। জীবন থেকে নেয়া খুব সম্ভবত একমাত্র চলচ্চিত্র যার মুক্তির জন্য হাজার হাজার মানুষ মিছিল করেছে, স্লোগান দিয়েছিল। ছবি মুক্তি পায় ১৯৭০ সালে।
১৯৬৯ সালের ঘটনা। আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন তুঙ্গে তখন। জহির রায়হান একদিন আমজাদ হোসেনকে ডেকে চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য লিখতে বললেন। গল্পটা হবে এমন যেখানে এক বোন আরেক বোনকে বিষ খাওয়াবে। আমজাদ হোসেন লেখাও শুরু করে দিলেন। তবে প্রথম দৃশ্যটা ছিল এ রকম– এক বোন আরেক বোনকে দুধভাত খাওয়াচ্ছে। জহির রায়হান জিজ্ঞেস বললেন, খাওয়াতে বললাম বিষ, আর খাওয়াচ্ছেন দুধ। আমজাদ হোসেন বলেন, আরে, দুধ না খাওয়ালে বিষ খাওয়াব কীভাবে?
জীবন থেকে নেয়া” ছবিটির কাহিনি হল ভাই ও বোন, ভাইয়ের বউ, বোনের বর , আর একটা চাবির গোছা-– এই চার জন সদস্য নিয়েই একটি পরিবার। সেই পরিবারই হয়ে ওঠে একটি দেশ, একটি সংসার, একটি চাবির গোছা, একটি আন্দোলন, একটি চলচ্চিত্র।
জহির রায়হান তখন ব্যতিক্রমধর্মী সিনেমার পরিচালক। ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান চলচ্চিত্র উৎসবে কাঁচের দেয়াল শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র এবং তিনি শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রকার হিসেবে পুরস্কার পান। সে উৎসবে সর্বোচ্চ সংখ্যক পুরস্কারও তিনি পেয়েছিলেন। জহির রায়হানের আরেকটি পরিচয় তিনি একজন ভাষা সৈনিক। ভাষা আন্দোলনে তার অবদান অনেক। জহির রায়হান সম্ভবত বাংলাদেশের একমাত্র কথাসাহিত্যিক যিনি হয়ত কথাশিল্পী হতেন না; যদি বায়ান্নর একুশ না ঘটতো।
জহির রায়হান সিনেমায় এনেছিলেন নায়িকা ববিতাকে। তাঁর মতো গুণী মানুষের হাত ধরে ববিতা চলচ্চিত্র জগতে এসেছিলেন। সত্যজিৎ রায় “অশনি সংকেত” করার সময় ববিতাকে বলেছিলেন, “তোমার দুলাভাই বড় মানের পরিচালক! তাঁর “জীবন থেকে নেয়া” অসাধারণ একটি সিনেমা।
হাজার বছর ধরে, শেষ বিকেলের মেয়ে, আরেক ফাল্গুন, বরফ গলা নদী আজও তাঁকে বাঁচিয়ে রেখেছেন পাঠকের কাছে। তাঁর লেখা ছোট গল্পও বাংলা সাহিত্যে বড় জায়গা করে নিয়েছে।
তবে, সবকিছু ছাড়িয়ে তিনি একজন দেশ সেরা চলচ্চিত্র পরিচালক। আজ ১৯ অগাস্ট তার জন্মদিবস। বাংলা সাহিত্যে ও চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি জহির রায়হান এর জন্মদিবসে বিনম্র শ্রদ্ধা।
লেখকঃ রাজিক হাসান