হিজরী সালের প্রথম মাস মুহাররম মাস,মুহাররম মাস ‘হারাম’ মাস গুলির অন্যতম।অর্থাৎ এই মাস গুলিকে সম্মানীত মাস হিসেবে অবহিত করা হয়েছে,এ সকল মাসে সকল প্রকার পাপ ও অন্যায় কাজ করতে কোরআন হাদীসে নিষেধ করা হয়েছে।৪ টি মাসকে সম্মানীত ঘোষনা করা হয়েছে।এর মাঝে রাসুল সাঃ মুহাররম মাসকে ‘আল্লাহর মাস’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। হাদীস থেকে আমরা জানতে পারি যে, মুহাররম মাসে নফল রোজা রাখার সওয়াব অন্য সকল নফল রোজার চাইতে অনেক বেশি।রাসুল সাঃ বলেছেন রামাদানের পরে সবচেয়ে বেশি ফযীলতের সিয়াম হল মুহাররম মাসের সিয়াম। মুসলিম শরীফ।মুহাররম মাসের ১০ তারিখকে ‘আশূরা’বলা হয়।এই দিনে রাসুল সাঃ রোজা পালনের জন্য উৎসাহ দিয়েছেন।জাহেলী যুগে মক্কার মানুষেরা আশূরার দিন রোজা পালন করত এবং কাবার গেলাফ পরিবর্তন করত। হিজরতের পূর্বে মক্কায় অবস্থান কালে রাসুল সাঃ এ রোজা পালন করতেন। কিন্তু মদীনায় এসে দেখেন যে,ইহুদীরা আশূরার দিনে রোজা পালন করে।তিনি ইহুদীদের বলেন তোমরা কেন এদিন রোজা পালন কর? তারা বলেন,এটি একটি সগান দিন।এ দিনে আল্লাহ মূসা আঃ ও তার জাতিকে পরিত্রাণ দান করেন এবং ফিরআউন ও তার জাতিকে নিমজ্জিত করেন।এ জন্য মূসা আঃ এ দিন শুকরিয়া হিসেবে রোজা রাখেন।তাই আমরাও এ দিন সিয়াম পালন করি। তখন রাসুল সাঃ বললেন মুসা আঃ বিষয়ে আমাদের অধিকার বেশি এরপর তিনি এ দিবস সিয়াম পালন করেন এবং সিয়াম পালন করতে নির্দেশ প্রদান করেন।’ বুখারী শরীফ ‘রামাদানের সিয়ামের আগে আশূরার সিয়াম ফরয ছিল।রমযানের সিয়াম ফরয হওয়ার পর আশূরার সিয়াম মুস্তাহাব হিসেবে গন্য করা হয়।কেউ তা পালন না করলে গোনাহগার হবেনা।তবে পালন করলে রয়েছে অফুরন্ত সাওয়াব ।রাসুল সাঃ বলেনঃ আমি আশা করি,আশূরার সিয়াম এর কারনে আল্লাহ পূর্ববর্তী বৎসরের কাফফারা করবেন।’মুসলিম শরীফ ‘ অনেকেই আশূরা বলতে শুধুই কারবালার ঘটনাকেই বুঝে থাকেন,যদিও আশূরার সিয়ামের সাথে কারবালার ঘটনার কোন সম্পর্ক নেই। তাই কারবালার ঐতিহাসিক এই ঘটনা বিষয়ে কিছু ঘটনা পর্যালোচনা করা অতিব প্রয়োজন। মুসলিম জাতির জন্য এ ঘটনা ছিলো অত্যান্ত বেদনাদায়ক। রাসুল সাঃ ওফাতের ৫০ বছর পরে ৬১ হিজরীর ১০ই মুহাররম শুক্রবার কারবালার প্রান্তরে
কিছু মানুষের হাতে নির্মম ভাবে শহীদ হন রাসুলের দৌহিত্র ইমাম হোসাইন রাঃ।ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা যায়, কুফার মানুষেরা হোসাইন রাঃ কে খলিফা হিসেবে গ্রহন করতে আগ্রহ প্রকাশ করে।এসময় তিনি মদীনায় অবস্থান করছিলেন। তখন তিনি কুফায় যেতে আগ্রহ প্রকাশ করলে মদীনা, মক্কার সাহাবীগন ও তার পরিবারের প্রিয়জনেরা তাকে কুফায় যেতে নিষেধ করেন। সবশেষে তিনি ও তার পরিবারের ১৯ জন সহ প্রায় ৫০ জনের এক কাফেলা নিয়ে কুফায় রওয়ানা হন।ইয়াজিদ এ খবর পেয়ে কুফার গভর্নর নুমান ইবনে বশির রাঃ কে পদচ্যুত করে উবাইদুল্লাহ ইবনু যিয়াদকে কুফার দায়িত্ব প্রদান করেন।ইয়াযিদ তাকে নির্দেশ দেন ইমাম হোসাইন যেন কোনভাবেই কুফায় প্রবেশ করতে না পারেন সে ব্যবস্থা করতে।তারপর ৪০০০ যোদ্ধার এক বাহিনী হুসাইন রাঃ কে কারবালার প্রান্তরে অবরোধ করে।হুসাইন রাঃ তাদেরকে বললেন, আমিত তোমাদের সাথে যুদ্ধ করতে আসিনি,তোমরাই আমাকে ডেকে নিয়ে এসেছ।তোমরাই তোমাদের বাইয়াত পরিত্যাগ করেছ।তাহলে আমাদেরকে ছেড়ে দাও আমরা মদীনায় চলে যাই,অথবা সিমান্তে গিয়ে তাদের সাথে জিহাদ করি,অথবা ইয়াযিদের সাথে দেখা করে বুঝাপড়া করি।উবাইদুল্লাহ প্রথমে এ প্রস্তাব মেনে নেয়,কিন্তু সিমার নামে এক সহচর বলে,যদি হুসাইন কে তোমি তোমার বাগে পেয়েও হত্যা না করেও ছেরে দাও তবে তোমার সব পদোন্নতির সব সুযোগ নষ্ট হয়ে যাবে।তখন সে হুসাইন রাঃও তার পরিবার সহ সকল সাথিদেরকে হত্যার নির্দেশ দেয়। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। কুফার গভর্নর উবাইদুল্লাহ ইবনে যিয়াদ হুসাইন রাঃএর মাথার মস্তক ও তার পরিবারের জীবিত কিছু সদস্যকে দামেসকে ইয়াযিদের কাছে প্রেরন করে।ইয়াযিদ বাহ্যিক দুঃখ প্রকাশ করে বলে আমিত তাকে কুফায় প্রবেশ করতে বাধা দিতে বলেছিলাম, তাকে হত্যার নির্দেশ দেইনি। এরপর সে হুসাইন রাঃএর পরিবার পরিজনকে মদীনায় প্রেরন করে।কারবালার ঘটনায় কোনো সাহাবীই দায়ী নন।শীয়া সম্প্রদায়ের মানুষেরা এ দিন কারবালার ঘটনার নামে প্রতি বছর আশূরার দিনে শোক,মাতম,তাযিয়া ইত্যাদির আয়োজন করে। এই সবগুলি ইসলাম বিরুধী কর্ম।আহলে বাইতকে মহব্বত করা আমাদের ঈমানের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সুতরাং নবী বংশের ভালবাসার নামে শুধুমাত্র ধারনা বা ইতিহাসের ভিত্তিহীন কাহীনীর উপর নির্ভর করে কোন একজন সাহাবীর উপর বিরক্তি প্রকাশ আমাদের ইমানের জন্য ধ্বংসাত্বক।সুপ্রিয় পাঠক বিস্তারিত আলোচনা আর সম্ভব নয়।তবে আমরা বুঝতে পারি যে,দুনিয়ার সাময়িক জয় পরাজয় দিয়ে চূড়ান্ত ফলাফল বিচার করা যায়না।হুসাইন এর হত্যায় জড়িত প্রতিটি ব্যাক্তিই কয়েক বছরের মধ্য সাকাফীর বাহিনীর হাতে নিহত হয়।মাত্র ৪ বছরের মাথায় ইয়াযিদ মারা য়ায়।তার পুত্র মোয়াবিয়াও কয়েক দিনের মাঝে মারা যায়।এরপর কোনোদিন এ বংশের কেউ শাসক হয়নি।সত্যকে আকড়ে ধরা,সত্যের পথে সকল বিপদ ও কষ্ট মেনে নেওয়াই মুমিনের দায়িত্ব।মহান আল্লাহ আমাদেরকে তার দেখানো সন্তুুষ্টির পথে অবিচল থাকার তৌফিক দান করুন।আমীন।